সব চেষ্টা ব্যর্থ, প্রয়াত খালেদা জিয়া; তারেক জানালেন—‘আম্মা আর নেই’
খালেদা জিয়ার প্রয়াণ: বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক যুগের অবসান
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ফোন করে তাঁকে বলেছেন, “আম্মা আর নেই।” ভোররাতেই চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সংকটজনক সময় অতিক্রম করছেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন ঢাকার সংবাদমাধ্যমকে জানান, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর পাশে ছিলেন পুত্র তারেক জিয়া ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছিলেন খালেদা জিয়া। কিডনি, লিভার ও হৃদ্যন্ত্রের জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে বিগত কয়েক বছর তিনি কার্যত চিকিৎসার ওপর নির্ভর করেই জীবনযাপন করছিলেন।
গত মাসের ২৩ তারিখ তাঁর শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হলে তাঁকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে লন্ডনে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ওমানের রাজপরিবারের দেওয়া একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সও ঢাকা বিমানবন্দরে প্রস্তুত ছিল। তবে শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতির কারণে শেষ পর্যন্ত তাঁকে বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়।
স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে অন্তর্বর্তী সরকার খালেদা জিয়াকে ‘বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং তাঁর জন্য দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বরাদ্দ করে। মনে করা হয়, দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক অবদানের স্বীকৃতি হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সে সময় লন্ডনে অবস্থানরত তাঁর পুত্র তারেক রহমান দ্রুত দেশে ফেরার উদ্যোগ নেন এবং গত ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় পৌঁছে মায়ের চিকিৎসার তদারকিতে যুক্ত হন। সোমবার গভীর রাতে চিকিৎসকেরা তারেক রহমানকে হাসপাতালে তলব করলে তিনি সপরিবারে সেখানে যান। ভোররাতে বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পরই আবার হাসপাতালে যেতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পর চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী আর নেই।
খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৮১ সালে তাঁর স্বামী, শহীদ রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তিনি রাজনীতির সক্রিয় নেতৃত্বে আসেন এবং দলের চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর অসুস্থতার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
খালেদা জিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালে অবিভক্ত দিনাজপুরে। তাঁর পারিবারিক শিকড় বর্তমান বাংলাদেশের ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে। সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহের পর তাঁর জীবন নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম—সবকিছুতেই তিনি ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে।
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আরও দুই দফা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর প্রয়াণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক দীর্ঘ অধ্যায়ের অবসান ঘটল, নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
